সন্তানের লালন-পালন (চতুর্থ কিস্তি)

সব কিছুর ফিকির আছে, শুধু দ্বীনের ফিকির নেই

হযরত নূহ (আ.)-এর ছেলে সম্পর্কে বলা হবে, সে কাফির ছিলো; তাকেও কুফরী থেকে ফেরানো সম্ভব হয়নি। এর দায়ভার হযরত নূহ (আ.)-এর উপর বর্তায় না। কারণ, তিনি ছেলের পেছনে লাগাতারা নয়শত বছর মেহনত করেছেন, তাকে দ্বীনের দাওয়াত দিয়েছেন। তাই তিনি জবাবদিহিতা থেকে মুক্ত হয়ে গেছেন।  অথচ আমাদের অবস্থা হলো, আমরা দু’-একবার বলি। তারপর হাত-পা ছেড়ে দিই। অথচ উচিত ছিলো, সব সময় বিচলিত থাকা, যেমনিভাবে দুনিয়ার আগুন থেকে রক্ষার জন্য সব সময় প্রস্তুত থাকি। অন্তরের ব্যথা যদি এ পর্যায়ের না হয়, তাহলে বুঝতে হবে, দায়িত্ব পুরোপুরি পালন হয় নি। আজকাল দেখা যায়, ছেলের প্রতিটি বিষয়ে মাতা-পিতা নজর রাখে। লেখাপড়া, থাকা-খাওয়াসহ সকল কিছু ঠিকমতো চলছে কিনা, এ নিয়ে পিতা-মাতার কত মাথা ব্যথা। কিন্তু দ্বীনের ব্যাপারে কোনো মাথাব্যথা নেই।

কিছুটা বদদ্বীন হয়ে গেছে

এক তাহাজ্জুদগোজার ব্যক্তি। তার ছেলে উচ্চশিক্ষা অর্জন করেছে। ইংরেজি শিখেছে। তারপর ভালো একটি চাকরিও পেয়েছে। একদিন তার বাবা খুশির সঙ্গে বললেন : ‘মা-শা-আল্লাহ’ আমার ছেলে উচ্চশিক্ষা অর্জন করেছে, ভালো চাকুরিও পেয়েছে। এখন সমাজে সে মাথা উঁচু করে অবস্থান করছে। কিন্তু কি-ছু-টা বদদ্বীন হয়ে গেছে (!) বাবার কথার ভঙ্গিতে বোঝা যায়, একটু বদদ্বীন হওয়া তেমন কিছু নয়। এটা সাধারণ বিষয়। অথচ ভদ্রলোক বড় দ্বীনদার! নিয়মিত তাহাজ্জুদও পড়েন!!

শুধু রূহটা নেই

জাস্টিজ মাওলানা ত্বাকী উসমানী (রহ.) বলেন, আব্বাজান মুফতী মুহাম্দ শফী (রহ.) একটা ঘটনা বলতেন। একলোক মারা গেছে। লোকেরা জীবিত মনে করে তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে এসেছে, ডাক্তার যেন পরীক্ষা করে দেখেন, এ ব্যক্তির কী হয়েছে? সে নড়াচড়া করে না কেন? ডাক্তার পরীক্ষা করে বললেন : লোকটি সম্পূণই ঠিক আছে। মাথা গেছে। তেমনিভাবে ভদ্রলোক নিজের ছেলে সম্পর্কে মন্তব্য করছেন, মাশাআল্লাহ সে এখন অনেক বড় হয়েছে। কিন্তু শুধু একটু বদদ্বীন হয়ে গেছে। যেন বদদ্বীন হওয়া তেমন গুরুত্বপূর্ণ কোনো বিষয় নয়। এর দ্বারা বড় কোনো ক্ষতি হবে এমন কোনো বিষয়ও নয়।

নতুন প্রজন্মের অবস্থা 

আজ আমাদের অবস্থা হলো, সকল বিষয়ের ফিকির আছে; কিন্তু দ্বীনের কোনো ফিকির নেই। দ্বীন যদি এতই পরিত্যক্ত বস্তু হয়, তাহলে নামায পড়া, তাহাজ্জুদ পড়া কিংবা মসজিদে যাওয়ার মতো কষ্ট করার দরকার কী (!) নিজেও সন্তানের মতো হয়ে যান না কেন? শিশুকালে সন্তানকে পাঠিয়ে দেয় নার্সারীতে। সেখানে তাকে কুকুর-বিড়াল শেখানো হয়; কিন্তু দ্বীনী শিক্ষা দেওয়া হয় না। ফলে নতুন প্রজন্মের ভবিষ্যত অন্ধকারে চলে যাচ্ছে। তারাই তো জাতির ভবিষ্যত। জাতির ভবিষ্যত নেতৃত্ব তো তাদের হাতে। অথচ তারা নিজেরাই হারিয়ে যাচ্ছে গোমরাহীর আবর্তে, কুরআন ও হাদীসের শিক্ষা থেকে দুরে বহুদূরে।

No comments

Powered by Blogger.