সন্তানের লালন পালন (তৃতীয় কিস্তি)

সন্তান যদি না মানে?

আল্লাহ তাআলা বলেছেন : তোমরা নিজেকে এবং পরিবার পরিজনকে দোযখের আগুনস থেকে বাঁচাও। আসলেও এখানে একটি সন্দেহের অবসানের প্রতি ইঙ্গিত আছে, যে সন্দেহটি সাধারণত আমাদের অন্তরে জাগে। সন্দেহটি হলো, আজকাল যখন কাউকে বলা হয়, নিজের ছেলে-মেয়েকে দ্বীনের পথে আনার যথেষ্ট চেষ্টা করেছি, কিন্তু কী করবো? সমাজের পরিবেশ খারাপ, অনেক বোঝানোর পরও তারা মানতে চায় না। পরিবেশের কারণে তারা বিপথে চলে গেছে। তাই কী আর করা... তাদের আমল তাদের কাছে, আমার আমল আমার কাছে। আরো প্রমাণ হিসেবে পেশ করে, হযরত নুহ (আ.)-এর ছেলেও তো কাফির ছিলো। নূহ (আ.) ও তো তাকে প্লাবন থেকে বাঁচাতে পারেন নি। অনুরূপভাবে আমরা চেষ্টা করতে ত্রুটি করি নি। না মানলে তো কিছু করার নেই।

দুনিয়ার আগুন থেকে কীভাবে বাঁচান?

কুরআন মাজীদের এ আয়াতটিতে ‘আগুন’ শব্দ উল্লেখ করা হয়েছে। এ শব্দটিতেই সন্দেহের নিরসন রয়েছে। তা এভাবে যে, পিতা-মাতা যদি সন্তানকে ধর্মহীনতা থেকে বাঁচানোর পূর্ণ চেষ্টা করে, তাহলে তারা দায়িত্ব থেকে মুক্তি পাবে। সন্তানের দায় তখন সন্তানের উপরই বর্তাবে। কিন্তু দেখতে হবে, পিতা-মাতা কী পরিমাণ চেষ্টা করছে। কুরআন মাজীদে ‘আগুন’ শব্দটি ব্যবহার করে এদিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, পিতা-মাতা নিজের ছেলে-মেয়েকে গুনাহ থেকে এমনভাবে রক্ষা করবে, যেমনিভাবে দুনিয়ার আগুন থেকে রক্ষা করার চেষ্টা করে। যেমন, একটি লেলিহান অগ্নিকুণ্ড, যার সম্পর্কে মানুষ নিশ্চিত যে, এ অগ্নিকুণ্ডে যে প্রবেশ করবে, সে নির্ঘাত মারা যাবে। সুতরাং যদি কোনো অবুঝ শিশু সুন্দর মনে করে অগ্নিকুণ্ড প্রবেশ করতে চায়, তখন তার পিত-মাতা কী করবে? পিতা-মাতা কি সন্তানবকে শুধু এই উপদেশ দিয়েই নিশ্চিন্ত বসে থাকবে যে, বাবা! ওখানে যেও না। যদি যাও, তাহলে পুড়ে কয়লা হয়ে যাবে, তুমি নির্ঘাত মারা যাবে। এ উপদেশ সত্ত্বেও যদি সন্তান অগ্নিকুণ্ডে প্রতি অগ্রসর হয়, তখন পিতা-মাতা কী ভূমিকা পালন করবে? তারা কি মনে করবে, যে উপদেশ দিয়েছি এতেই তো যথেষ্ট হয়েছে! আমাদের দায়িত্ব আমরা শেষ করেছি। এবার মানা না মানা তার ব্যাপার। পিতা-মাতা এভাবে দায়মুক্তির চিন্তা করবে, নাকি সন্তানকে বাঁচানোর জন্য বিচলিত হয়ে পড়বে? অবশ্যই বিচলিত হবে। বরং সন্তানকে অগ্নিকুণ্ডের পাড় থেকে নিয়ে না আসা পর্যন্ত দুনিয়া তাদের কাছে অন্ধকার মনে হবে।
আল্লাহ তাআলা বলেন : হে আমার মুমিন বান্দা! তুমি নিজের সন্তানকে দুনিয়ার সামান্য আগুন থেকে রক্ষা করার জন্য এত ব্যাকুল, এর জন্য শুধু মুখের উপদেশের উপর আস্থা রাখতে পার না। সেখানে জাহান্নামের সেই ভয়াবহ অগ্নিকুণ্ড, যার ভয়াবহতা কল্পনাকেও হার মানায়, সেই অগ্নিকুণ্ড থেকে নিজের পরিবার-পরিজনকে বাঁচানোর জন্য শুধু মুখের উপদেশকে যথেষ্ট মনে কর কীভাবে? সুতরাং পিতা-মাতা সহজেই বলতে পারবে না দায়মুক্তির কথা। তাদেরকে বুঝিয়েছি, নিজের দায়িত্ব আদায় করেছি, এসব বলে মুক্তির পাওয়া যাবে না।

No comments

Powered by Blogger.