সন্তানের লালন-পালন (ষষ্ঠ কিস্তি)
শিশুদের সঙ্গেও মিথ্যা না বলা
হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে এক মহিলা নিজের শিশুকে কোলে নেয়ার জন্য ডাকছিলো। শিশুটি আসতে চাচ্ছিলো না। মহিলা শিশুটিকে বললেন আসো, তোমাকে একটা জিনিস দেবো। একথা শুনে শিশুটি মহিলাটির কাছে আসল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহিলাকে জিজ্ঞেস করলেন : তুমি যে বলেছিলে তাকে কিছু দিবে, সত্যিই কি তাকে কিছু দেওয়ার ইচ্ছা তোমার আছে? মহিলা বললো : ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার কাছে একটা খেজুর আছে। তাই খেজুরটি তাকে দেওয়ার ইচ্ছা আছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : যদি তোমার এই ইচ্ছা না থাকতো, তাহলে তোমার দ্বারা অনেক বড় শুনাহ হয়ে যেতো। কারণ, তখন তোমার অঙ্গীকারটি মিথ্যা হতো। তখন তার কচিমনে তুমি একথা বসিয়ে দিতে যে, মিথ্যা ও ওয়াদা ভঙ্গ তেমন কোনো খারাপ কাজ নয়।
এ হাদীসটি একথার প্রতি ইঙ্গিত করে যে, কচি বয়স থেকেই শিক্ষা শুরু হয়। বিন্দু বিন্দু বিষয় থেকেই সে চরিত্র শেখে। বর্তমানে দেখা যায়, পিতা-মাতা নিজেদের ছেলে-মেয়ের ভুল-ত্রুটি ধরে না। মনে করে, অবুঝ শিশু, তাকে মুক্তমনে বড় হতে দেওয়া উচিত। সকল ব্যাপারে ধরাধরি করা অনুচিত।
প্রকৃতপক্ষে শিশু অবুঝ হতে পারে, কিন্তু মাতা-পিতা তো অবুঝ নয়। তাদের উচিত সন্তানের ছোটখাটো বিষয়েও লক্ষ্য রাখা।
অন্য এক হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
عن عمر بن شعيب عن ابيه عن جده رضى الله عنه قال : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم مروا اولادكم بالصلاة وهم ابناء سبع
واضربوا هم عليها وهم ابناء عشر، وفرقوا بينهم فى المضاجع
‘হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর [রা.] থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : নিজের সন্তানদেরকে সাত বছর বয়সে নামাযের নির্দেশ দাও। যদিও তখনও নামায ফরয হয় নি। কিন্তু অভ্যাস গড়ে তোলার জন্য এ বয়স থেকেই নামাযের আদেশ দিতে হবে। ‘দশ বছর বয়সে নামায না পড়লে তাকে মারধর কর এবং ঘুমের বিছানাও আলাদা করে দাও।’
এ হাদীসের আলোকে হাকীমুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলী থানবী (রহ.) বলেছেন : শিশুকে সাত বছরের পূর্বে নামায, রোযা ইত্যাদির জন্য চাপ সৃষ্টি করা যাবে না। তাই বলা হয়, সাত বছরের পূর্বে কোনো শিশুকে মসজিদে আনা উচিত হবে না। তবে মসজিদে পবিত্রতা নষ্ট না করার শর্তে কেবল অভ্যাস গড়ে তোলার জন্য আনা যাবে।
চলবে.......
No comments